বিআরটিএর অনিয়ম পর্ব-১

বদলি ও পদোন্নতি নিয়ে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কর্মকর্তাদের অসন্তোষ

Passenger Voice    |    ০২:৩৫ পিএম, ২০২৩-১১-১৫


বদলি ও পদোন্নতি নিয়ে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কর্মকর্তাদের অসন্তোষ

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর বদলি ও পদোন্নতি নিয়ে প্রশাসন শাখার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কর্মকর্তাদের মন্তব্য বদলী ও পদোন্নতি প্রদানে কোন ধরণের নীতিমালা মানছে না তারা। বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে কেউ কেউ দীর্ঘ সময় ধরে ঢাকা মহানগরীর বিআরটিএর সার্কেল গুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন। এই বিষয়ে অবগত থাকলেও অনিয়ম ও তদবীরের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী বিআরটিএর সদর কার্যালয়ের অনৈতিক চাহিদা পূরণ ও মোটা দাগে রাজনৈতিক তদবীর ব্যবহার করতে না পেরে সারা জীবন কাটাতে হচ্ছে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বিআরটিএর কার্যালয় গুলোতে।  কর্মকর্তা কর্মচারীদের এমন ক্ষোভ প্রকাশ নিয়ে প্যাসেঞ্জার ভয়েসের ৫ পর্বের প্রতিবেদনের আজ ১ম পর্ব।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা ১৯৯২ এর ১১ নং ধারা অনুযায়ী মেকানিক্যাল এ্যাসিষ্ট্যান্ট পদে অন্যুন ৬ বছরের চাকুরীর অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ৩৪ শতাংশ মেকানিক্যাল এ্যাসিষ্ট্যান্টকে মোটরযান পরিদর্শক পদে পদোন্নতি দেয়া হবে। বাকী ৬৬ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগ দেয়া হবে বলে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত বিধিমালা ২০১৬ সালের ৯ মে সংশোধন করে আরো একটি গেজেট প্রকাশ করে সরকার। উক্ত গেজেটের ৩১ নং ধারায় মোটরযান পরিদর্শক পদে ৪৫ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৫৫ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হবে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। 

১৯৯২ সালের এই বিধিমালার অনুযায়ী বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ ২০১৪ সালে মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট পদ থেকে মোটরযান পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি দিয়েছিল মো. আব্দুল মান্নান, আনোয়ার হোসেন-২, মো. নুরুল ইসলাম, মো. ওমর ফারুক, মো. রুকনুজ্জামান, মো. আব্দুল করিম, মো. আব্দুল হালিম, মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী, এফ এইচ এম মইদুর রহমান, মো. নুরুল ইসলাম, নুর মোহাম্মদ তোয়াহা, মো. কামরুজ্জামান-১, শেখ মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ, বশির উদ্দিন আহমেদ, কামরুজ্জামান-২, শেখ মো. রাজিবুল ইসলাম, মো. জাহাঙ্গীর আলম, জিয়াউর রহমানসহ মোট ১৮ জনকে।

একই সময়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশন পিএসসি থেকে সরাসরি মোটরযান পরিদর্শক (নন ক্যাডার গেজেটেড কর্মকর্তা) পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হয় ১৬ জন কর্মকর্তা। তারা হলেন, ফয়সাল হাসান, ফয়েজ আহম্মেদ, কে এম হোসনে মোবারক, মো. রাশেদ্দুজ্জামান, পলাশ খীসা, তীর্থ প্রতীম বড়ুয়া, মো. নাজমুল হাসান, মোহাম্মদ জমির হোসেন, মো. আল ফয়সাল, মুহাম্মদ অহিদুর রহমান, মো. রফিকুল ইসলাম, মাহবুব রাব্বানী, দেবাশীষ বিশ্বাস, আনিসুর রহমান, সালেহ আহাম্মদ, কে মো. সালাউদ্দীন। 

সূত্র বলছে, মোটরযান পরিদর্শক পদে কর্মরত কর্মকর্তাগণের জ্যৈষ্ঠতা তালিকায় বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু অনিয়ম করেছিলেন ২০১৪ সালে। সেই অনিয়মের বলি হয়েছেন সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত মোটরযান পরিদর্শক গণ। তাদের দাবী ২০১২ সালে বিআরটিএর ২৭ টি মোটরযান পরিদর্শক (সরাসরি নিয়োগ) পদ খালী আছে মর্মে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল পাবলিক সার্ভিস কমিশন পিএসসি। উক্ত নিয়োগ পক্রিয়ায় ১৮ জন লিখিত পরীক্ষায় পাস করলেও সকল পক্রিয়া শেষে নিয়োগ পেয়েছিল মোট ৯ জন মোটরযান পরিদর্শক। তারা হলেন, রবিউল ইসলাম, শাহজামান, ইমরান খান, মাহবুব কামাল, মো. মুছা, কেশব কুমার দাস, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মাহবুবুর রহমান রিয়াজুল ইসলাম। তারা সকলে এখন সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) পদে পদোন্নতি পেয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। 

এই সময় পদোন্নতি ১৯৯২ সালের বিধিমালা অনুযায়ী ৩৪ শতাংশ পদোন্নতি মাধ্যমে মোটরযান পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পদ খালী ছিল ৯ জনের। কিন্তু ২০১৪ সালে অনিয়মের মাধ্যমে ১৮ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। সেই হিসেবে ২০১৪ সালে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত মোটরযান পরিদর্শকগণ জ্যেষ্ঠতার তালিকায় ৯ জনের পেছনে পড়ে যায়। সেই হিসেবে এফ এইচ এম মঈদুর রহমানের তালিকার পরে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত মো. ফয়সাল হাসানের নাম থাকার কথা ছিল বলে দাবী করেন তারা। জ্যৈষ্ঠতার তালিকায় মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল হালিম পর্যন্ত সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) পদে পদোন্নতি দেয়া হলেও কেউ অসন্তোষ প্রকাশ করেননি। কিন্তু কামরুজ্জামান-১ শেখ মাহতাব উদ্দিন আহমেদ ও সর্বশেষ জাহাঙ্গীর আলমকে সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এর দায়িত্ব দেওয়ায় সরাসরি নিয়োগ প্রাপ্তদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। 

পদোন্নতি প্রাপ্ত মোটরযান পরিদর্শক মো. নুরুল ইসলাম, নুর মোহাম্মদ তোয়াহা, মো. কামরুজ্জামান-১, শেখ মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ, বশির উদ্দিন আহমেদ, কামরুজ্জামান-২, শেখ মো. রাজিবুল ইসলাম, মো. জাহাঙ্গীর আলম, জিয়াউর রহমান এর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) পদে পদোন্নতির পর্বে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত ২০১৪ সালের মোটরযান পরিদর্শক গণ সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এর পদোন্নতি পাওয়ায় যোগ্যতা রয়েছে বলে জানান তারা।  শুধু ২০১৪ সালের সরাসরি নিয়োগ নই ২০১৫ সালের নিয়োগের আগেও তানভীর আহমেদ নামের একজনকে মোটরযান পরিদর্শক পদে পদোন্নতি দিয়েছিল বিআরটিএ।

এদিকে ২০১৪ সালে পাবলিক সার্ভিস কমিশন পিএসসি এর মাধ্যমে সরাসরি মোটরযান পরিদর্শক পদে নিয়োগ পেয়েছেন কে মো. সালাউদ্দিন। কিন্তু তালিকায় তাকে রাখা হয়েছে ৩২ জন জুনিয়র কর্মকর্তার নিচে। ফলে সিনিয়র হয়েও ৩২ জন ব্যক্তিকে গত ৮ বছর স্যার সম্বোধন করতে হচ্ছে তাকে । বিষয়টি লজ্জাজনক মনে করছে সরাসরি নিয়োগ প্রাপ্ত মোটরযান পরিদর্শক গণ। 

এদিকে চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অতিরিক্ত দায়িত্ব ও চলতি দায়িত্ব প্রদানের জন্য একটি নির্দেশনা দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারী করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু বর্তমানে সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) পদে পদোন্নতি দেয়া যাবে ১/২ জনকে আর সরাসরি নিয়োগ হবে ১৭ জন। সরাসরি নিয়োগের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এর ১৭ টি পদ খালী থাকলেও জ্যৈষ্ঠতার তালিকা অনুসরণ না করে মোটরযান পরিদর্শক মো. কাফিউল হাসান মৃধা, মো. মোশারফ হোসেন, নুরুস সাফা সরকার, মো. মাহফুজ হোসেন, রাশেদ মিলন, হাফিজুর রহমান খানকে যথাক্রমে বিআরটিএর দিনাজপুর, রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, বরগুনা, লালমনিরহাট, হবিগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পরিচালকের (ইঞ্জিঃ) অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করেছেন।  এই কর্মকর্তাগণ যখন (সহকারী পরিচালকের (ইঞ্জিঃ) অতিরিক্ত দায়িত্ব) পদবী ব্যবহার করেন তখন সিনিয়র মোটরযান পরিদর্শকগণ তাদের স্যার ডাকতে হচ্ছে। অথচ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে তারা পদবীর পাশে রুটিন দায়িত্ব শব্দটি লিখতে হবে অতিরিক্ত দায়িত্ব লিখার সুযোগ নেই। তাদের পদবী লিখতে হবে মোটরযান পরিদশক(সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এর রুটিন দায়িত্ব)।

জানতে চাইলে বিআরটিএর পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ আজিজুল ইসলাম প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, পদোন্নতি ও নিয়োগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণের জ্যৈষ্ঠতা তালিকা নিয়ে যদি কোন আপত্তি থাকে তাহলে তারা আমাদের বরাবরে আবেদন করতে পারবে। আবেদন করলে আমরা কমিটি গঠন করে সেটা পরিবর্তন করতে পারবো। কিন্তু আবেদন না করলে আমরা পূর্বের যে তালিকা পেয়েছি সে হিসেবে কাজ করে যেতে হবে। বর্তমানে সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) পদে পদোন্নতি দেয়া যাবে ১/২ জনকে আর সরাসরি নিয়োগ হবে ১৭ জন। মোটরযান পরিদর্শক পদে সরাসরি নিয়োগের পদ খালী আছে ৩১ জনের। আমরা ইতিমধ্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি। নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই সার্কেল গুলোর মোটরযান পরিদর্শকগণকে সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এর রুটিন কাজ গুলো সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছি।